Home » Ghost Story – ভূতের গল্প » অনুসরণ (ভৌতিক গল্প)
আপনার সবচেয়ে প্রিয়
বন্ধু পাগল হয়ে যাচ্ছে
এমন ভাবনায়ই কেমন গা
ছমছমে। আমার প্রিয়
বান্ধবী লারার অবস্থা
দেখে তেমনটিই মনে
হলো। ও আমার কাছে ওর
সমস্ত গোপন কথা
শেয়ার করে। যেসব কথা
অন্য কেউ জানে না। এমন
গোপন কথা যা বুকের
রক্ত হিম করে দেয়!
তারপর আমি জানতে
পারলাম কণ্ঠগুলোর
কথা। এখন আমার সত্যি
দুশ্চিন্তা হচ্ছে….
লারা দীর্ঘদিন কথাটি
আমার কাছে গোপন
রেখেছিল। তবে আমি
বুঝতে পারছিলাম ওর
কিছু একটা হয়েছে।
অনেক দিন ধরেই
দেখছি সব সময়।
অন্ধকার করে রাখে মুখ।
চেহারায় দুশ্চিন্তার
ছাপ পরিষ্কার। প্রশ্ন
করলে কিছু হয়নি বলে
এড়িয়ে যায়। কিন্তু ও
যে বড় ধরনের কোনো
সমস্যায় পড়েছে। তা
আচার-আচরণ দেখে
বোঝা যায়। লারাকে শেষ
কবে হাসতে দেখেছি
মনে পড়ে না আমার।
সেদিন ইংরেজির
ক্লাসে ওকে চেহারা
আরও ম্লান করে ঢুকতে
দেখলাম। আমার পাশের
ডেস্কে বসল। তারপর
ভীষণ করুণ মুখ করে
জানালা দিয়ে তাকিয়ে
রইল বাইরে। আমাকে
গ্রাহ্যই করল না।
খুব রাগ হলো আমার।
নোট খাতা থেকে এক
টুকরো কাগজ ছিঁড়ে
লিখলাম, কী রে
চেহারাটা অমন করে
রেখেছিস কেন? মনে
হচ্ছে তোর কেউ
মরেছে।
কাগজটা লারার ডেস্কে
রেখে কনুই দিয়ে মৃদু
পুঁতো দিলাম। লাফিয়ে
উঠল। ইঙ্গিতে
কাগজের টুকরোটা
দেখালাম। লেখাটা পড়ল
ও। বুকটা ধক করে উঠল
আমার।
ঠিক ওই সময় আমাদের
ইংরেজির টিচার মি.
ডাডলি ডাক দিলেন
আমাকে। এডগার অ্যালান
পোর দ্য র্যাভেন
আবৃত্তি করে শোনাতে
বলছেন। আমি উঠে
দাঁড়ালাম। শুরু করলাম
আবৃত্তি। পোর এই
কবিতাটি বেশ প্রিয়
আমার। কিন্তু আজ কেন
জানি গাটা শিউরে
উঠল কবিতা পড়ার
সময়।
প্রথম স্তবক পড়ার পর
স্যার আরেকজনকে
দ্বিতীয় স্তবক পড়তে
বললেন।
আমি বসে
পড়লাম ডেস্কে।
তাকালাম লারার দিকে।
আমাকে একটা কাগজ
এগিয়ে দিল ও স্যারের
চোখ বাঁচিয়ে।
ভাঁজ খুলে মেলে ধরলাম
কাগজটি। একটি মাত্র
বাক্য লেখা : ভয়ানক
একটি দুর্ঘটনা ঘটতে
চলেছে।
সরাসরি চাইলাম লারার
দিকে। ওর মায়াবী
চোখে ফুটে আছে ভয়।
আবার চিরকুটের দিকে
নজর ফেরালাম। আবার
লেখাটা পড়লাম। কোনো
প্রশ্ন বা অনুমান নয়,
লারা পরিষ্কার বলে
দিচ্ছে একটি ঘটনা
ঘটতে চলেছে। বুঝতে
পারলাম না এ লেখার
মানে কী।
আরেকটা কাগজ ছিঁড়ে
লিখলাম, তোমার মাথা
ঠিক আছে তো?
কাগজটা মুড়ে চালান
করে দিলাম লারার
ডেস্কে।
লেখাটা পড়ে ঠোঁট
কামড়াল লারা। সাথে সাথে
আরেকটা কাগজে দ্রুত
কী যেন লিখে ফেলল।
তারপর ওটা ঠেলে দিল
আমার ডেস্কে। আমার
দিকে তাকাল না
পর্যন্ত।
কাঁপা হাতে কাগজটা
খুললাম আমি। দেখতেই
পাবে লেখা চিরকুটে।
সেদিন লারার সাথে
স্কুলে আর কথা হলো না।
ওকে খুঁজে পেলাম না
কোথাও। আরেক বন্ধুর
সাথে ফিরে এলাম বাড়ি।
রাতে একবার ভাবলাম
ফোন করি লারাকে।
কিন্তু ও আমাকে
বারবার এড়িয়ে চলছে
মনে পড়তেই রাগ হলো।
চলে গেল ফোন করার
ইচ্ছে।
পরদিন সকালে দেখা
হয়ে গেল লারার সাথে
ইংরেজি ক্লাসে ঢোকার
সময়। দোরগোড়ায়
দাঁড়িয়েছিল। শূন্য
দৃষ্টি চোখে। একটু পরে
ইংরেজির টিচার এলেন।
তবে ডাডলি স্যার নন,
অন্য আরেকজন।
আমার পেছনে বসেছে
লারা। আমার কানের কাছে
মুখ এনে ফিসফিস করে
বলল, ডাডলি স্যার আর
তার স্ত্রী কাল রাতে
কার অ্যাক্সিডেন্ট
করেছেন। দুজনেই
মারাত্মক আহত।
শুনেছি স্যার অনেক
দিন ক্লাস নিতে
পারবেন না।
ডাডলি স্যারের জন্য
খুব কষ্ট হলো আমার।
মাত্র গত বছর বিয়ে
করেছেন ভদ্রলোক।
হঠাৎ একটা কথা মনে
পড়তে হিম একটা
স্রোত বয়ে গেল
শিরদাঁড়া বেয়ে। ঘাড়
ঘুরিয়ে তাকালাম লারার
দিকে। ওর চোখ ঝকঝক
করে জ্বলছে দামি
পাথরের মতো। বাঁকা
হাসি ঠোঁটে। দেখলে
তো আমি মিথ্যা
বলিনি, ফিসফিস
করল লারা।
ওর ঝকঝকে চোখের
চাউনি সহ্য হলো না
আমার, নামিয়ে নিলাম
চোখ । ভাবতে কষ্ট
হলো এই আমার
বাল্যবন্ধু লারা। যার
সাথে কেজি থেকে
পড়ছি স্কুলে। স্যারের
জন্য ওর একটুও কষ্ট
হচ্ছে না? সেই কথাটা
মনে পড়ে গেল আবার।
কাল রাতেই না লারা
চিরকুটে
অ্যাক্সিডেন্টের
কথা
লিখেছিল? হঠাৎ
অসুস্থ বোধ করতে
লাগলাম আমি।
সারাটা ক্লাসে একবারও
লারার দিকে চাইতে
পারলাম না চোখ তুলে।
ঘণ্টা পড়তেই ওর আগে
বেরিয়ে পড়লাম ক্লাস
থেকে। আমার মনে তখন।
একটা চিন্তাই ঘুরপাক
খাচ্ছে যে করেই হোক
লারা অ্যাক্সিডেন্টের
কথা। আগেভাগে জেনে
ফেলেছিল। সেদিন আর
অন্য ক্লাসও করতে
ইচ্ছে করল না। এতটাই
অস্বস্তিবোধ
করছিলাম
আমি।
লারাকে এড়িয়ে যেতে
চাইলেও পারলাম না। বাসে
ওঠার
জন্য লাইনে
দাঁড়িয়ে আছি, দৌড়াতে
দৌড়াতে
এল ও। ওকে
দেখে কেটে পড়ার তাল
করছিলাম, হাত তুলে
থামিয়ে দিল।
দাঁড়াও, চেঁচাল লারা। কথা
আছে তোমার সাথে।
দাঁড়িয়ে থাকলাম।
হাঁপাচ্ছে তারা। ঘাম
ফুটেছে মুখে। তোমাকে
ক্লাসে খুঁজে না পেয়ে
ভাবলাম বাস স্টপেজে
যাই, হাঁপাতে হাঁপাতে
বলল লারা। বাসায় যাচ্ছ?
হ্যাঁ, ওর দিকে না
তাকিয়েই জবাব দিলাম
আমি।
আজ রাতে কোথাও
বেরুচ্ছ না তো? জানতে
চাইল লারা।
কোথাও বেরুচ্ছি না।
কেন?
না বেরুনোই ভালো।
আমাকে লাইন থেকে বের
করে বলল, আজ রাতে
ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড
ঘটবে।
অনেকক্ষণ স্থির
দৃষ্টিতে তাকিয়ে
রইলাম ওর দিকে। কথা
বলার সময় কেঁপে গেল
গলা। কে লাগাবে আগুন–
তুমি?
লারার মুখটা হঠাৎ বাঁকা
হয়ে গেল, যেন ভেতরে
খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।
ওরা আমাকে শুধু বলেছে
আগুন লাগবে, হিসিয়ে
উঠল ও। কে লাগাবে
জানি না। চট করে রাগ
উঠে গেল মাথায়। ওর কাঁধ
ধরে ঝাঁকুনি
দিলাম। কী
বলছ, লারা? ওর ঠাণ্ডা
ঝকঝকে চোখে চোখ
রাখলাম আমি। এসব
ভয়ঙ্কর কথা কে বলে
তোমাকে?
লারা কাঁধ ঝাঁকিয়ে,
আঁকি মেরে মুক্ত করল
নিজেকে। তারপর দৌড়
দিল রাস্তার দিকে।
ফিরেও চাইল না। বাড়ি
ফেরার পথে সারাক্ষণ
ভাবলাম কী করা উচিত
আমার। বাবা-মাকে বলে
দেব নাকি স্কুলের
প্রিন্সিপাল। স্যারকে
জানাব? কিন্তু কেউ
যদি বিশ্বাস না করে
আমার কথা?
সে রাতে এগারোটা
পর্যন্ত থাকলাম
টেবিলে। আমার ভাই
সিনেমায় নিয়ে যেতে
চেয়েছিল। যাইনি।
সোশাল স্টাডিজের
ওপর একটা নোট
লিখলাম। নিচ তলায়,
ড্রইং রুম থেকে টিভির
আওয়াজ ভেসে আসছে।
হঠাৎ চেঁচামেচির শব্দ
শুনতে পেলাম। ব্যাপার
কী জানার জন্য এক
দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে
নেমে এলাম নিচে।
টিভিতে খবর হচ্ছে। যা
দেখলাম তাতে হিম হয়ে
গেল বুক।
ভাই যে সিনেমা হলে
মুভি দেখাতে নিয়ে
যেতে চেয়েছিল আমাকে
সেই প্রেক্ষাগৃহেই আগুন
ধরে
গেছে। টিভির
এগারোটার খবরে সেই
ঘটনাই বিস্তৃত
দেখাচ্ছে।
খবর দেখে অসুস্থ, বমি
বমি ভাবটা আবার ফিরে
এল। আরেকবার ঘটনাটা
ঘটেছে। যে করেই হোক
লারা আগে জানতে
পেরেছে অগ্নিকাণ্ডের
কথা। ও বলেছিল আজ
রাতে কোথাও আগুন
লাগবে।
তক্ষুনি ফোন করলাম
লারার বাড়িতে। ওর মা
বললেন হঠাৎ করে
লারার জ্বর এসেছে।
জ্বরে কী সব আবোল
তাবোল বকছে। আমি
লারার মাকে দুএকটা
সান্ত্বনা বাক্য শুনিয়ে
রেখে দিলাম ফোন।
পরদিন স্কুলে এল না
লারা। স্কুলের সবাই
উত্তেজিত হয়ে
সিনেমা হল এর
অগ্নিকাণ্ডের কথা
বলছিল। আমাদের
স্কুলের একটি ছেলে
জনতার হুড়োহুড়িতে
আহত হয়েছে। তবে
সিনেমা হল-এর খুব
বেশি ক্ষয়ক্ষতি
হয়নি। হল কর্মচারীরা
ফায়ার এক্সটিংগুইশার
দিয়ে নিভিয়ে ফেলেছে
আগুন। তবে
অগ্নিকাণ্ডের কারণ
জানা সম্ভব হয়নি।
ক্লাসটা আমার কাটল
অদ্ভুত ঘঘারের মাঝে।
খুব ইচ্ছে করছিল
লারার গোপন কথাটা
বলে দিই কাউকে।
কিন্তু আদৌ কি কেউ
বিশ্বাস করবে এ কথা?
শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম
মাকে জানাব।
বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই
উদ্বিগ্ন
মুখে মা বলল,
লারার মা ফোন
করেছিলেন। লারার
অবস্থা খুবই খারাপ।
হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
লারা নাকি বারবার
তোর কথা বলছিল।
কথাটা শুনে ছ্যাৎ করে
উঠল বুক। লারার জন্য
যা খুশি করতে পারতাম
আমি। কিন্তু এখন ভয়
করছে ওর কথা শুনে।
লারাদের সাথে আমাদের
একটা পারিবারিক
সম্পর্ক আছে। তাই মা-ই
আমাকে হাসপাতালে
নিয়ে গেল অসুস্থ
বন্ধুকে দেখতে।
রাস্তায় কোনো কথা
বললাম না দুজনে।
সারাক্ষণ ভাবছিলাম
লারা কি ওর গোপন
কথাগুলো বলার জন্যই
আমার সাথে দেখা করতে
চেয়েছে? এরপর কী
করব আমি?
লারার কেবিনে ঢুকলাম।
টের পেলাম বুকের ভেতর
দমাদম পিটছে
হৃৎপিন্ড। লারার চেহারা
থেকে রক্ত শুষে
নিয়েছে কেউ। তবে
চোখ জোড়া জ্বলছে।
আতঙ্কিত হয়ে লক্ষ
করলাম মণির ভেতরে
লাল টকটকে দুটি বিন্দু
রুবির
মতো জ্বলজ্বল
করছে।
আমাকে দেখে ফ্যাকাসে
হাসল লারা। আমার মা ওর
দিকে এগিয়ে গেল।
কেমন আছ, মা, বলতে
বলতে। লারা দুর্বল গলায়
বলল, ডেভের সাথে একটু
কথা বলব, আন্টি।
আপনার যদি…।
লারার মা মেয়ের শিয়রে
বসেছিলেন।
কাঁদছিলেন।
এবার উঠে
দাঁড়ালেন। বললেন, চলুন,
মিসেস উইনস্টন। আমরা
বাইরে গিয়ে দাঁড়াই।
লারাটা তখন থেকে ডেভ,
ডেভ করছে।
মা কিছু না বলে বেরিয়ে
গেল।
আমি লারার মাথার
কাছে বসলাম। লারা আমার
মাথাটা
ধরল দুহাত
দিয়ে, টেনে নিল ওর
মুখের ওপর।
ওরা বলেছে আমি আর
বাঁচব না, ফিসফিস
করল লারা।
ডাক্তাররা বলেছেন?
ভীরু গলায় জানতে
চাইলাম আমি, ওর
চোখের দিকে চাইতে
ভয় লাগছে।
না, কণ্ঠগুলো, বলল
লারা। কণ্ঠগুলো বলেছে
আমি মারা যাব… খুব
শীঘি।
ভেতরে ভেতরে কাঁপুনি
উঠে গেছে আমার, ইচ্ছে
করল এক ছুটে পালিয়ে
যাই। কিন্তু লারা আমার
সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ
বান্ধবী। ওকে এভাবে
রেখে যাই কী করে?
ওকে আমার সাহায্য করা
দরকার।
কোনো কণ্ঠ তুমি
শুনতে পাওনি, লারা,
ওকে সান্ত্বনা দেয়ার
চেষ্টা করলাম। আর
চিন্তা করিও না।
শীঘ্রি ভালো হয়ে
উঠবে তুমি।
সিধে হয়ে বসলাম আমি।
লারার স্নান চেহারায়
যন্ত্রণাকাতর হাসির
সাথে ফুটে আছে ভয়ার্ত
একটা ভাব।
আমি পাগল নই,
ফিসফিস করল লারা।
ওরা সারাক্ষণ আমার
সাথে কথা বলে।
কণ্ঠগুলো কথা বলে।
হঠাৎ আমার ঘাড় চেপে
ধরল লারা, ওর মাথার
কাছে নিয়ে এল মাথা।
হিসিয়ে উঠল, শোন!
চিৎকার করে উঠলাম
আমি। এক ঝটকায়
ছাড়িয়ে নিলাম
নিজেকে। ওর দিকে
বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছি, দেখি
তৃপ্তির হাসি হেসে
চোখ বুজল লারা।
কণ্ঠগুলো আমাকে
বলেছে আমি এখানে যেন
বসে থাকি, বিদায়
জানাই লারাকে। কারণ
ওর সাথে আমার আর দেখা
হবে না। আমার ইচ্ছে
করল দৌড়ে পালাই।
তাহলে সব কিছুর হাত
থেকে রক্ষা পাব। কিন্তু
কেউ
যেন মেঝের সাথে
আমার পা পেরেক দিয়ে
গেঁথে রেখেছে। নড়তে
পারলাম না এক চুল।
.
ভুল ভেবেছি আমি। ওই
কণ্ঠগুলো আমার সাথেই
আছে। গত দুই মাস ধরে
কথা বলছে আমার সঙ্গে।
ভয় পাচ্ছি আমি। কারণ
ওরা যা বলছে বাস্তবে
ঠিক তেমনটি ঘটে
চলেছে। ইদানিং ওরা
একটা অ্যাক্সিডেন্টের
কথা বলছে। বোঝাতে
চেষ্টা করছে
অ্যাক্সিডেন্টের
শিকার
কে হবে। কিন্তু
আমি বুঝে গেছি কে
হবে ওদের পরবর্তী
শিকার।
-জে.বি. স্টাম্পার