GolpoBD
এই শহর বড্ড একা - একাকি বেঁচে থাকাটা এতোই কঠিন? - GolpoBD
Home » Sad Story – দুঃখের গল্প » এই শহর বড্ড একা - একাকি বেঁচে থাকাটা এতোই কঠিন?

চোখটা সবে বুজে ছিলাম শ্যামলের চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল। ইট টিন পাথরের ঘর গুলো কখনো ভালোবাসা হতে পারলো না, কারণ এখানে ভালোবাসা নেই। শহরটা বড়ো একা অবিশ্বাস বঞ্চনাতে ভরা। শ্যামল রোজ ওর বৌ পেটায় অভিযোগ বিহারী মুদি দোকানে ওর লটপটর চলছে। শ্যামলের বৌ এর অভিযোগ শ্যামল ও তো বস্তির রাখির ঘরে মুখমারতে যায়। ওতো বিহারী দোকান থেকে ধরা বাকিতে মাল পায় তাই হেসে একটু কথা বলে। যাতে বকেয়া টাকা চাইতে না পারে। দুইজনেই হুমকি দেয় একে অপরকে ছেড়ে চলে যাবে কিন্তু যায়না। হঠাৎ মনে পরে গেলো পঞ্চাশ ষাট বছরের পুরনো স্মৃতি। আমাদের গ্রামে বা আশপাশের গ্রামে খুন জখম হতো না। তা বলে কি, হাতাহাতি হতো না? সে-ও বলার মত নয়। তবে তেড়ে যাওয়া, কুঁদে কুঁদে ছুটে আসা ছিল। ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ ছিল। মারপিটের উপক্রম হতো। বউ বেটিরা টেনে ধরত। আর দু’পক্ষই গজরাতো, ‘ছাড় আমাকে দেখব ওর একদিন কী আমার একদিন।’ চাইলেই হাত ছাড়াতে পারত। কিন্তু ছাড়াত না। কিন্তু মুখে তর্জন গর্জন চলত। একবার এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে সেই আত্মীয়কে তাঁর বাড়িতে সম্পত্তি গত বিবাদে নিগৃহীত হতে দেখি ভাইদের হাতে। ছোট ভাই মেজভাই মিলে গলায় বসে যায়, বড়ভাইয়ের। বাড়িটি আমার খুব প্রিয় জায়গা ছিল। আমি তারপর থেকে আর যাই নি বাধ্য না হলে। আমি তখন পঞ্চম শ্রেণি। ভাইদের বউদের মধ্যে ছিল খুব ভাব। কোনো বিবাদ ছিল না। গ্রামে কেউ শত্রু ছিলো না। বাংলা ছোট গল্প choto golpo হঠাৎ কালু মোল্লা জামাই হয়ে এলো এ গ্রামে বিয়েতে বউয়ের মারফৎ ফারাজ পেয়ে ২০ বিঘা বেশি জমি ভোগ করতেন, রাগ ছিলো তাতে কারো। কিন্তু ওদের মধ্যেও বাপ ব্যাটার লাঠি নিয়ে রুখে দাঁড়ানো দেখেছি। কিন্তু রক্তারক্তি হতো না। আওয়াজ শুনলেই গ্রামের লোক হাজির হয়ে যেতেন ওদের ছাড়তে। গ্রামে মিল মিশ ছিলো ভালো। আসলে তখনো গ্রামে কে হিন্দু কে মুসলমান জানতাম না। কালু মোল্লা গ্রামের বাইরের লোক ঐ প্রথম বললো হিন্দুরা এদেশে থাকতে পারবে না। গ্রাম বাসিরা ওর কথা শুনলো না। কিন্তু পরে ওর দল ভারী হয়ে গেলো । বললো হিন্দুদের মেরে ওদের জমি জায়গা গুলো আমরা দখল করবো। আমারা ভাবিনি কখনো আমাদের গ্রাম ছেড়ে যেতে হবে। কিন্তু খান বাহিনী এলো। আমি ভয়ে মুরগির ঘরে ঢুকে পড়েছিলাম। সেকালে বাঁশ ও মাটি দিয়ে চার পাঁচ ফুট উঁচু এবং আট বা দশ ফুট চওড়া করে হাঁস মুরগির ঘর বানানো হতো। হাঁস মুরগি ছাগল গোরু ছিল বহু মানুষের আয়ের ধারাবাহিক উৎস। জমিতে তো তখন একবার চাষ। বছরে তিন মাসের বেশি কাজ জোটে না। অনাহার অর্ধাহার শাক খেয়ে জীবন বাচায় ৬০ শতাংশ মানুষ। চোখের সামনে দেখলাম এতো বড়ো পরিবার রক্তমেখে পরে আছে। দিদি বেঁচে ছিলো। ওকে ওরা মারে নি বিবস্ত্র অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে ছিলো বারান্দায় সারা গায়ে আচারনো কামারানো চিহ্ন। সুন্দরী কাকীমাকে পেলাম না। সবাই বললো ওকে ওরা তুলে নিয়ে যাবে। ও পাড়ার দত্ত ঘোষরা রাতে কলকাতা পালাবে আমাদের ওদের সাথে যেতে বললো গ্রামের চাচা চাচীরা, এ গায়ের হিন্দু পরিবার বলতে ছিলাম তো আমরাই। জ্ঞান ফিরতে দিদি গলায় দড়ি দিলো। আমি একা হয়ে গেলাম। রেশমা আমার খেলার সাথি ছিলো। একটা ভালো লাগা যে ছিলো সেটা সবাই জানতো। আমি গ্রামের সবার প্রিয় ছিলাম। কালু মোল্লা গ্রামের হত্যা কর্তা বিধাতা, সবাই বললো রেশমার সাথে নিকা করিয়ে আমাকে ইসলাম কবুল করিয়ে রেখে দেওয়া হোক এ গ্রামে। রাজী হলো কালু মোল্লা। রেশমাকে ভালো বাসতাম ঠিকই কিন্তু, আমার পরিবারকেও ভালোবাসতাম। হাঁস মুরগির চিৎকারে ওঁরা আমার কান্নার শব্দ না পেলেও একে একে সব সদস্যকে ওরা মেরেছিলো আমার চোখের সামনে, অপরাধ ছিলো একটাই পরিচয় হিন্দু। তাই সেই মনে মনে আমি ভীষন হিন্দু হয়ে গিয়েছিলাম। চৌদ্দ বছর বয়সে আমি দেশে ভিটা ছেড়ে আত্মীয়হীন অচেনা শহরে এলাম একা। চেহারাটা লম্বা ছিলো তাই কাজ পেয়ে গিয়েছিলাম। রিক্সা চালানো মুটে বয়া সব কাজ করেছি। অথচ বাড়িতে পড়াশোনা ছাড়া কোনো কাজ করতাম না। কেউ ছিলনা আমার একা শহরে বাচতাম লাড়াই করে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ আসছে এ দেশে। এদেশ নাকি হিন্দুদের দেশ। মরিচঝাঁপি, দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবস্থিত একটি দ্বীপ। ১৯৭৮-৭৯ সালে সদ্যনির্বাচিত পশ্চিমবঙ্গের সিপিআইএ ম সরকার মরিচঝাঁপি গণহত্যা করলো। বাংলাদেশ থেকে আগত হাজার হাজার বাঙালি নমঃশূদ্র হিন্দু উদ্বাস্তুকে বলপ্রয়োগ আইনের সিআরপিসি ১৪৪ ধারায় মাধ্যমে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। সেই সময় সুপ্রিয়ার সাথে পরিচয়। ও ওর পরিবারকে হারালো মরিচ ঝাঁপিতে মানে এই হিন্দুদের দেশ হিন্দুস্তানে। আমি তখন একটা সরকারি চাকুরি জুটিয়ে নিয়েছি। আসলে সময় সুযোগ মতো পড়াশোনাটা চালিয়ে গিয়েছিলাম তো তাই কোন অসুবিধা হয়নি। বেশ সুখেই দিন কাটলো আমাদের একটা গোটা বছর আর দুই দশদিন হয়তো। রোহনকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেলো সুপ্রিয়া। দোষটা আমার। মা হবার উপযুক্ত বয়স ছিলো না ওর। নিজেকে খুনি ভেবে আর বিয়ে করলাম না। রোহন বড় হলো। ওর কথা একা একা ও বড় হয়েছে আমি শুধু টাকা দিয়েছি। বিয়ে করলো ওর পছন্দের মেয়েকে। কিন্তু মেয়ের আর মেয়ের মায়ের পছন্দ না আমি ওদের সাথে থাকি। তাই নিজের রক্ত জল করা পয়সায় গড়া বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম আবার একা। bangla choto golpo ছোট গল্প এই বস্তিতে একাকীত্ব কাটাতে এখানে বাচ্চা গুলো পড়াই। মানুষ করতে চাই এখানকার বাচ্চা গুলোকে। ওরা যেনো কেউ হিন্দু মুসলিম না হয় তারদিকে চোখ রাখি। যদিও নিজের ছেলেকেই আমি মানুষ করতে পারলাম না। একটা মেয়ের জন্য ও ওর বাবাকে ছেড়ে ছিলো ঠিক আছে কিন্তু পৃথিবীটাই ছেড়ে দিলো? ওর বৌ ওর অফিস কলিগের সাথে পালিয়েছে। খবরটা জানা জানি হতে গলায় দড়ি দিলো ও। এই শহর টা বড় একা। কিন্তু একাকি বেঁচে থাকাটা এতোই কঠিন?
Share:

Story Info:

Writer: Ariyan Islam
Date: 06-08-2022
Comment: 0
No Comment !
Name:

Text:

Smilies List