GolpoBD
অগোছালো স্বামির শিক্ষা। - GolpoBD
Home » Funny Story – হাস্যকর গল্প » অগোছালো স্বামির শিক্ষা।
আজকে আমার ঘরের সোফা, চেয়ার, টেবিল সব বিক্রি করে দিয়েছি। ঘরটা বেশ ফাঁকা হয়ে গেছে। এই একটু আগেই গাড়ি ভর্তি করে সব মালপত্র নিয়ে চলে গেল। গাড়িওয়ালাকে বিদায় দিয়ে গেটের সামনে থেকে আসার সময় এক আন্টি বলল, হ্যাঁ গো তোমরা যে অন্য বাসায় চলে যাচ্ছো বললে না তো! এরকম হুট করে কেউ চলে যায়! তোমরা তো বেশ চাপা স্বভাবের মানুষ!! আমি কোনো উত্তর না দিয়েই ওনাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম। সিড়ির কাছে যেতেই পাশের ফ্ল্যাটের ভাবি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, আপনার হাতের ভর্তা গুলো খুব মিস করবো ভাবি। আর আপনি যে কী মজাদার বিরিয়ানি করতেন উফফ! এখানে আপনার মতো আর কাউকে পাইনি ভাবি। আপনি একদম আমার মনের মতো ছিলেন। প্রত্যেক শুক্রবার এলেই আপনার হাতের নানা রকম খাবারের স্বাদ পেতাম। বাটি ভর্তি এত এত খাবার আর কে দেবে আমাকে! আমি কপাল কুঁচকে বললাম, আপনার কি আমার জন্য কষ্ট হচ্ছে নাকি খাবারের জন্য কষ্ট হচ্ছে? ভাবি হিচকি তুলতে তুলতে বলল, আপনার জন্যই কষ্ট হচ্ছে ভাবি। আপনারা চলে গেলে মজার মজার খাবার গুলো আর কে খাওয়াবে আমাকে! এখানের সব গুলো ভাড়াটিয়াই তো বদ। আমাকে খালি হিংসে করে ভাবি। ওই যে মেরিনা ভাবি বলছিলো, আপনারা চলে গেলে নাকি ওনারা আপনাদের ঘরে উঠবে। খুশিতে তো গদোগদো হচ্ছিলো আপনাদের যাওয়ার কথা শুনে। পেটে পেটে কত হিংসে ভাবি ভেবেছেন! আপনিই একমাত্র সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন। আআআআ...... ভাবির কান্নার আওয়াজ বাড়তে লাগলো। আমি ওনার ন্যাকা কান্নায় না ভুলে তাড়াতাড়ি এখান থেকে কেটে পড়লাম। দরজার সামনে যেতেই বাড়িওয়ালা আর তার বউয়ের আগমন হলো। আঙ্কেল কোমড়ে হাত দিয়ে রাগি রাগি চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। ওইদিকে আন্টি কাপড়ে মুখ গুজে কাঁদছেন। আমি জিজ্ঞেস করতেই আঙ্গেল বললেন, মা গো আমাদের কি কোনো ভুল হয়েছে? আমাদের কোনো ব্যবহারে কি কষ্ট পেয়ছো? ইফতি বাবারে তো আমি আমার ছেলের মতোই ভালোবাসতাম। তাহলে কেন এমনটা করলে? তোমার আন্টি কথাটা শোনার পর থেকেই যে কান্না শুরু করেছে আর থামছেই না। আমাদের মায়া কাটিয়ে কিভাবে চলে যাবে তোমরা! পারবে যেতে? আচ্ছা সামনের মাস থেকে ভাড়া দিতে হবে না। তোমাদের যখন সুবিধে হবে দিবে। কিন্তু এইভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যেও না। আমাদের তো কোনো সন্তান নেই। তোমাদের মতো ভালো ভাড়াটিয়া আমি আমার এত বছর বয়সে একটাও পাইনি। তোমদেরকে সবসময় সন্তানের নজরেই দেখেছি। কী এমন হলো যে তোমাদের নতুন বাসায় উঠতে হচ্ছে? আমার এই ছয়তলা বিশিষ্ট বাড়িটা কি খুব খারাপ? আমি কিছু বলার আগেই ইফতি অফিস থেকে চলে এলো। প্রচন্ড রাগি স্বরে বলল, তুমি নাকি বাসার সমস্ত ফার্নিচার বিক্রি করে দিয়েছো? আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, তোমাকে কে বলল? ইফতি রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে বলল, আদনান বলেছে। মেরিনা ভাবি নাকি ওনাকে ফোন করে বলেছে এসব। ওই তো আমাকে ফোন করে জানালো যে তুমি সব ফার্নিচার বেচে দিয়েছো। ওরা ভেবেছে আমরা বোধহয় নতুন ফ্ল্যাটে উঠবো। কেন করেছো এই কাজ? আঙ্কেল এবার বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা নতুন বাসায় যাচ্ছো না? এতক্ষণে আন্টিরও কান্না থেমে গিয়েছে। আমি হেসে বললাম, না যাচ্ছি না। নতুন বাসায় কেন যাব? ইফতি বলল, তাহলে সোফা, চেয়ার, টেবিল এগুলো কেন বেচে দিলা? আমি বললাম, তোমাকে শায়েস্তা করার জন্য। ইফতি অবাক হয়ে বলল, মানে! মানে হলো এই যে, তুমি তোমার সমস্ত জামাকাপড় যেখানে খুশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখো। সোফার উপর শার্ট, প্যান্ট। চেয়ার- টেবিলের উপর টাই, ময়লা মোজা, জুতা। বিছানার উপর ভেজা গামছা, তোয়ালে। আর সেসব গোছাতে গোছাতে আমার জীবনটা অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। তিনটে বছরেও তোমাকে শোধরাতে পারিনি। এত অগোছালো মানুষ নিয়ে সংসার করা যায় না। আমার দিনের অর্ধেকটা চলে যায় তোমার এসব অগোছালো জিনিসপত্র গোছাতে গোছাতে। ইফতি কিছু বলার আগেই আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ভেবো না খাট তো আর বিক্রি করতে পারবে না। তাহলে এখন থেকে খাটের উপর সমস্ত কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখবে। এই ভুলটা ভুলেও করবা না। আমি যখন এত গুলো ফার্নিচার বিক্রি করে দিতে পেরেছি, তখন আমি খাটও বেচে দিতে পারবো। আর তারপর কিন্তু ফ্লোরে শুতে হবে। এবার তুমিই ডিসাইড করো কী করবা। নতুন ফার্নিচার কিনে এখন থেকে সুন্দর গোছালো ছেলের মতো থাকবা নাকি আমাকে খাট বিক্রি করে দিতে বাধ্য করবা। চয়েজ ইজ ইউরস্। ইফতি একদম চুপ হয়ে গেছে। ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোচ্ছে না। হয়তো আমাকে মনে মনে দজ্জাল বউ ভাবছে। তাতে আমার বয়েই গেল। এরকম অগোছালো হাসবেন্ডদের কীভাবে টাইড দিতে হয় তা আমার ভালো করেই জানা আছে। আঙ্কেল হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। ইতোমধ্যেই আন্টি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, তুমি যে আমার কত বড় উপকার করেছো মা তুমি জানো না। তোমার এই আঙ্কেলের সাথে চল্লিশ বছর সংসার করছি। ইনিও আমার জীবনটা তেজপাতা করে দিলো। যেখানে সেখানে জামাকাপড় ভুড়িয়ে রাখে। ওনার জন্য কোনো কিছু গুছিয়ে রাখতে পারি না। বিছানার মধ্যে লুঙ্গি ছড়িয়ে রাখবে, ভেজা গামছা ফেলে রাখবে। এত বছর ধরে এই যন্ত্রণা সহ্য করছি। আজ তোমার জন্য এর সুরাহা পেলাম। আজই আমি ঘরের সব ফার্নিচার বেচে দিবো। তুমি আমাকে একটু খোদ্দের খুঁজে দিও তো। দাঁড়াও বুড়ো তোমার হচ্ছে। আমাকে জ্বালিয়ে মারার শোধ তুলবো আজ। একথা বলেই আন্টি গটগট করতে করতে উপরে চলে গেলেন। আঙ্কেল তার পেছন পেছন যাচ্ছে আর বলছে, ফুলবানু ওওও ফুলবানু.....খোদ ্দের আসার আগে আমি সব কিছু গুছিয়ে দিই? আমি হাসতে হাসতে রুমের ভেতর যাচ্ছি। ইফতি আমার পেছন পেছন আসছে আর বলছে, আচ্ছা খাট বেচার আগে সব গুছিয়ে দিলে হবে? এই শোনো না.......। Zannatul Eva (সমাপ্ত)
Share:

Story Info:

Writer: Ariyan Islam
Date: 24-10-2022
Comment: 0
No Comment !
Name:

Text:

Smilies List