Home » Romantic Love Story – রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প » ফেসবুক এর প্রেম।
বিয়ের ৫ বছর পর আজ প্রথম
বাবার বাড়ি আসলাম।৫ বছর
পরে আবার বাবার মুখে মনি
ডাক শুনতে পেলাম।এই ৫ টা
বছর চাতক পাখির মতো বসে
থাকতাম কখন বাবার মুখে
মনি ডাক শুনতে পাবো।
ভালোবেসে বিয়ে করার
অপরাধে আমি হারিয়ে
ছিলাম আমার পরিবার, সেই
সাথে হারিয়েছিলাম
বাবা ডাকার অধিকার।
রাফিনের সাথে আমার
পরিচয় হয় ফেসবুকে। তিনি
একজন লেখক ছিলেন। সম্প্রতি
তার বেশ কিছু বই ও বের
হয়েছিল। আমি তার লেখা
প্রত্যেকটা গল্প পড়তাম,
লাইক কমেন্ট করতাম। কিন্তু
কখনো ইনবক্সে কথা হতো
না। হঠাৎ একদিন দেখি
রাফিন নিজে থেকে
মেসেজ করেছে , এই যে মিস,
আপনি আমার ফ্রেন্ডলিস্টে
না থাকার পরেও আমার গল্প
পড়েন,লাইক কমেন্ট করেন ,
কখনো কি ফ্রেন্ডলিস্টে
আসার ইচ্ছা হয় না?
আমি তার মেসেজ পেয়ে
এতোটাই খুশি হয়েছিলাম
যে আমার বু*ক ধরফর করছিল,
হাত পা কাঁপছিল, আমি
তাকে রিপ্লাই দেওয়ার
মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম
না। অনেক ভেবেচিন্তে
তাকে রিপ্লাই করি ,
হাজার হোক প্রিয় লেখক
বলে কথা। এভাবেই শুরু হয়
তার সাথে আমার কথা বলা ,
এরপর ভালোলাগা তারপর
ভালোবাসা।
দেখতে দেখতে এক মাস চলে
গেল। ততোদিনে আমাদের
প্রেম জমে একেবারে
পায়েস হয়ে উঠেছিল। এরই
মধ্যে রাফিন প্রেমের টানে
নোয়াখালী থেকে মাগুরা
চলে আসল। সেই দিন টা ছিল
আমার জীবনের বেস্ট একটা
দিন।
রাফিন কে সামনাসামনি
দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে
গেছিলাম। রাফিনের শ্যাম
বর্ণ , মুখে চাপ দাড়ি, ঠিক
যেন আমার কল্পনার পুরুষ
আমার সামনে দাঁড়িয়ে
ছিল।
আর কতো দেখবে আমাকে
এবার চলো তোমাদের
মাগুরা শহর ঘুরে দেখি।
রাফিনের কথায় ধ্যান
ভাঙল আমার। ছিঃ ছিঃ
এতোক্ষণ ছ্যাঁচড়ার মতো
তার দিকে তাকিয়ে
ছিলাম ভাবতেই নিজেকে
নিজের লা*থি দিতে মন
চাইল। হুম চলুন।
এরপর রাফিন কে সব জায়গা
ঘুরে দেখালাম। ফুচকা,
ঝালমুড়ি, আইসক্রিম,
বিরিয়ানি খেলাম। মনে
হচ্ছিল আজকের দিনটা যদি
এইখানেই থেমে যেত তাহলে
আর ও কিছু সময় রাফিন কে
দেখতে পারতাম। কিন্তু সময়
ও স্রোত কারো জন্য
অপেক্ষা করে না। অবশেষে
বিদায় বেলা ঘনিয়ে আসল।
দুজনকেই দুজনের গন্তব্য ছুটতে
হলো।
বাসায় এসে দেখি
সিনেমার বাবাদের মতো
আমার বাবা ও রা*গি মুডে
দাঁড়িয়ে আছে।
বাবা কিছু বলবে?
তোমার সাথে রিক্সায়
ছেলেটা কে ছিল? কলেজে
তাহলে এসব করতে যাওয়া
হয়?আজ যদি পাশের বাসার
ভাবি এসে না বলত তাহলে
তো আমি জানতেই পারতাম
না যে আমার মেয়ে
পড়ালেখার নাম করে
ছেলেদের সাথে হাত
ধরাধরি করে রিক্সায় ঘুরে
বেড়াচ্ছো,কাল দেখা গেল
এর থেকে বেশি কিছু করছো।
কিন্তু আমি আমার
মানসম্মান নষ্ট হবার আগেই
তোমার বিয়ের ব্যবস্থা
করছি।
বিয়ের কথা শুনে আমার
পায়ের তলা থেকে মাটি
সরে গেল। আমি রাফিন কে
সত্যি অনেক ভালোবাসি।
তাকে ছাড়া অন্য কোন
ছেলেকে বিয়ে করা আমার
পক্ষে সম্ভব না।
কেটে গেল দুই দিন।এই দুই
দিনে রুম থেকে বের হয়নি
আমি। আম্মা এসে বলে গেল
আগামীকাল পাত্রপক্ষ
আমাকে দেখতে আসবে।
এদিকে বাবা ফোন নিয়ে
গিয়েছে যার কারনে
রাফিনের সাথে ও
যোগাযোগ করতে পারছি
না। নিজেকে কেমন পা*গ*ল
পা*গ*ল মনে হচ্ছিল। আমি
রাফিন কে ছাড়া কিছুই
ভাবতে পারছিলাম না।
ভালোবেসে এতোটাই
বিবেকহীন হয়ে গেছিলাম
যে সু*ই*সা*ই*ড করার জন্য
হাতের শি*রা পর্যন্ত
কা*ট*তে দ্বিধাবোধ
করিনি।
আমার অবস্থা দেখে বাবার
মন কিছুটা নরম হলো।
পাত্রপক্ষ কে আসতে নিষেধ
করে দিলেন।আর আমার ফোন
টা ও দিয়ে গেল।
রাতে অনেক সময় রাফিনের
সাথে কথা বললাম।
নিমিষেই মনটা ভালো হয়ে
গেল। এতো দিনের দুঃখ, কষ্ট
এক নিমিষেই উধাও হয়ে
গেল। খুশি মনে ঘুমোতে চলে
গেলাম।
কিন্তু সকালে রাফিন কে
আমাদের বাসায় দেখতে
পাবো এমনটা কখনো
ভাবিনি।পরে জানতে
পারলাম বাবা নাকি
রাফিন কে আমাদের বাসায়
আসতে বলেছে।
বাবা এসে রাফিন কে
বললেন তাহলে তুমি সেই
ভাগ্যবান পুরুষ যার জন্য
আমার মেয়ে তার বাবা
মায়ের ১৮ বছরের
ভালোবাসা ভুলে গেল।
এমনকি সু*ই*সা*ই*ড করার
জন্য হাতের শি*রা পর্যন্ত
কা*ট*তে ও দ্বিধাবোধ
করেনি। ভালোবেসে মানুষ
অন্ধ হয়ে যায় জানতাম
কিন্তু যে এতোটা
বিবেকহীন হয়ে যায়
জানতাম না। আমি
তোমাদের সম্পর্ক মেনে
নিব তবে আমার মেয়ে
হারাবে আমাকে বাবা
ডাকার অধিকার, হারাবে
তার পরিবার।ও তো সেদিন
ই আমার কাছে মৃ*ত হয়ে
গেছে যেদিন সু*ই*সা*ই*ড
করতে গেছে। এখন ও আমার
কাছে থাকা আর না থাকা
একই কথা।
কেটে যায় ৫ বছর।এই ৫ বছরে
আমি হাজার বার চেষ্টা
করেছি বাবার সাথে কথা
বলার, কিন্তু বলতে পারি
নি।
হঠাৎ আজ দেখি বাবা কল
করেছে, আমার তো বিশ্বাস
ই হচ্ছিল না। আমার মুখ
থেকে কোন কথা বের হচ্ছিল
না। প্রায় দুই ঘণ্টা বাবার
সাথে কথা বললাম। বাবা
আমাকে বাড়িতে যেতে
বললেন।
৫ বছর আগে বাবা যখন
বলেছিলেন আমি
ভালোবাসার জন্য বাবা
ডাকার অধিকার হারাবো ,
আমার পরিবার হারাবো ,
তখন আমার বিশ্বাস ছিল
আমি একদিন না একদিন
ঠিকই বাবা ডাকার
অধিকার ফিরে পাবো,
ফিরে পাবো আমার
পরিবার সেই আশাতে
রাফিনের হাত ধরে চলে
এসেছিলাম এক দূর অজানায়।
অবশেষে আজ আমার সেই
আশা পূরণ হলো।
অনেকেই বলে ফেইসবুকের
প্রেম রিয়েল হয় না।আর
বিয়ে হলেও তা শেষ পর্যন্ত
টিকে না। কিন্তু রাফিন
আমাকে অনেক সুখী
রেখেছে।এই ৫ বছরে কখনো
আমার চোখে পানি আসতে
দেয় নি। হয়তো পরিবারের
পছন্দে বিয়ে করলে এতোটা
সুখী আমি হতাম না।
আসলে সুখী হতে বেশি কিছু
লাগে না । লাগে একটা
বিশ্বস্ত হাত ,যেই হাত ধরে
নির্দ্বিধায় সারাজীবন
কাটিয়ে দেওয়া যায়। আর "
ভালোবাসা যদি সত্যি হয়
ফেইসবুকের প্রেমে ও সংসার
হয়"।
তবে আফসোস একটাই আজ ১০
বছর যাবৎ ফেইসবুক ইউজ
করছি,৭ বছর ধরে গল্প পড়ছি
অথচ না পারলাম একটা প্রেম
করতে আর না পারলাম এই
রকম একটা গল্প লিখতে।।
(সমাপ্ত)
#আফসোস
®অপরাজিতা_রহমান