"ছেঁ*ড়া শার্ট পড়েছিস
কেনো নীল? একটা শার্ট
কিনে দেওয়ার টাকাও কি
তোর বাবার কাছে নেই?"
কথাগুলো বলেই
তা*চ্ছি*ল্যের হাসি শুরু
করলো নীলের বন্ধুমহল। নীল
ল*জ্জা*য় চুপ হয়ে আছে ৷
কথা এড়াতে তাড়াতাড়ি
বন্ধুদের পাশ থেকে উঠে
বললো,
"আমি যাইরে। প্রিন্সিপাল
স্যারের কাছে যেতে হবে"।
নীল এইটা বলে যেই হাঁটা শুরু
করবে এমন সময় পেছন থেকে
নীলের একটা বন্ধু পুনরায়
বলে উঠলো,
" হ্যাঁ যা যা..স্যারের কাছে
গিয়ে বল..."স্যার...বেতনটা
সামনের মাসে দিয়ে
দিবো"।
শেষের কথাটা ভে*ঙ্গ করে
বলেই কুৎ*সিত*ভাবে সবাই
আবার হাসতে শুরু করে।
২.
"আগামীকালের মধ্যে বেতন
না দিলে তোমাকে
পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেওয়া
হবেনা।"
নীল মাথা নিচু করে
স্যারকে বললো,
"স্যার এইবার পরীক্ষাটা
দিতে দিন। পরীক্ষার পর
বাবাকে বলে সব পরিশোধ
করে দিবো।
" না নীল এইটা সম্ভব নয়।
এমনিতেই তোমার অনেক
টাকা জমে গেছে। বেতন
দিয়েই পরীক্ষা দিতে হবে
নয়তো..বাসায় বসে থেকো।
যাও...।
নীল চুপচাপ প্রিন্সিপাল রুম
থেকে বেরিয়ে আসে।
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে
সে। মাঠে আনমনে হাঁটছে
আর ভাবছে..কিভাবে এতো
টাকা বাবার থেকে
চাইবে? আজকাল মধ্যবিত্ত
জীবন নিয়ে চলাফেলা করা
বড় দায় হয়ে পড়েছে এই
শহরে।
এইসব ভাবতেই নীলের চোখ
থেকে দু ফোঁটা নুনা জল
গড়িয়ে পড়ে। সাথে সাথে
চোখের পানি মুছে নেয় সে।
ছেলেদের কান্না করা
বারণ কিনা!
২.
বাজারের ব্যাগের থলেটা
হাতে নিয়ে বাজারে ঘুরে
বেড়াচ্ছেন আরিফ সাহেব।
বাজারের জিনিসের যা
দাম বেড়েছে তা আর না
বললেই নয়৷ আরিফ সাহেব
অর্ধেক বাজার শেষে
লিস্টটা খুললেন আবার। খুলে
দেখলেন, বাজারের প্রায়
অর্ধেক জিনিসই কিনা
বাকি। কিন্তু হাতে টাকা
নেই। ভেতর থেকে বেরিয়ে
আসে চাপা ক*ষ্টে*র
দীর্ঘশ্বাস।
৩.
কলিংবেল বাজাতেই
আরিফ সাহেবের স্ত্রী
বললেন,
" বাড়িওয়ালা এসেছিলো
বাড়ি ভাড়া নিতে"।
আরিফ সাহেব ব্যগটা এক
পাশে রেখে সোফায়
বসলেন। ঘামে জর্জরিত হয়ে
আছেন তিনি। ওনার স্ত্রী
এক কাপ চা দিয়ে তরকারি
কাটতে বসলেন। আরিফ
সাহেব বললেন,
" টাকা সব শে*ষ কি করি
বলোতো"?
"তুমি আর কতো দিক দিয়ে
সামলাবে? সামান্য একটা
দারোয়ানি করে কি আর এর
থেকে বেশি সামলানো
যায়? ওসব নিয়ে চিন্তা
করোনা। দেখবে আল্লাহ
তায়ালা সবকিছু ঠিক করে
দিবেন।"
আরিফ মিয়া একটা
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
"১০ হাজার টাকা দিয়ে কি
হয় একটা সংসারে বলোতো
গিন্নি। সামান্য এ কয়টা
টাকা দিয়ে কি আর সংসার
চলে? মাস শে*ষ হতে না
হতেই হাতে টা*ন পড়ে যায়।
আদি, নীল আর মেঘ কোথায়"?
নীল কলেজে। মেঘ
প্রাইভেটে আর আদি বোধহয়
রুমে পড়ছে।
৪.
"কিরে মেঘ রিকশায় করে
যাবিনা?"
বান্ধবীদের এমন প্রশ্নে
অস্বস্তি অনুভব করলো মেঘ।
তারপর জোরপূর্বক হেসে
বললো,
" আসলে ইরা আমার না?
সামনে একটু কাজ আছে তাই
হেঁটে যাচ্ছি।"
"আরে এতে সমস্যা কি?
রিকশা থেকে নেমে
কাজটা সেড়ে নিবি। এতো
দূর হেঁটে যাবি কিভাবে?"
মেঘ কথাটা এড়াতে বললো,
"না না ভাই..এতো ঝামালা
করার দরকার নেই আমার।
নামবো আবার উঠবো শুধু শুধু
ঝামালা।
মেঘ মনে মনে বললো,
" যতো ক*ষ্টই হোক
আমাকেতো হেঁটেই যেতে
হবে। ব্যাগে যে একটা
টাকাও নেই৷
ইরার পাশ থেকে আলিয়া
বললো,
"আরে ইরা ছাড়তো। মেঘের
কাছে হয়তো টাকা নেই।"
মেঘ ভীষণ ল*জ্জা পেলো।
আবার আলিয়ার উপর রাগও
হলো। জানলেই কি সবার
সামনে ল*জ্জা দিতে হয়?
রাগে ল*জ্জায় কারও সাথে
কোনো কথা না বলে হাঁটতে
শুরু করে সে। হাঁটতে হাঁটতে
বিড়বিড় করে বললো,
"এই শহরের প্রতিটি দেয়ালে
মধ্যবিত্তদের জীবন
কাহিনী লেখা। এই জীবন
কাহিনীতে লেখা আছে
বাবার আ*ত্ম*ত্যা*গ,
মায়ের আ*ত্ম*ত্যা*গ
কিংবা..সন্তানদের
আ*ত্ম*ত্যা*গ।"
৫.
বাবার দরজার সামনে
দাঁড়িয়ে আছে মেঘ৷ অনেক
সংকোচ অনুভব করছে সে৷
বাবার কাছে আদৌ টাকা
আছে কিনা সেতো
জানেইনা। আরিফ সাহেব
দরজার বাইরে মেয়ের পা
দেখে মুচকি হেসে বললো,
" আম্মা তুমি বাহিরে
দাঁড়িয়ে কেনো? ভেতরে
এসো।"
মেঘ বাবার কন্ঠ পেয়ে
চমকে উঠে৷ বাবা তাকে
দেখে ফেলেছে যেতেতো
হবেই এখন। মাথায় ওরনা
টেনে মাথা নিচু করে
বাবার সামনে যায় সে।
মেয়েকে দেখে মলিন হাসে
আরিফ সাহেব। ওনার
ছেলেমেদের এই শ্রদ্ধাগুলো
খুব পছন্দ করেন তিনি৷ বাবা-
মায়ের সাথে গলা উঁচু করে
কখনো কথা বলাতো দূরের
থাক, চোখে চোখ রাখতে
ভ*য় পায় তারা। আরিফ
সাহেব বললেন,
"কি হয়েছে আম্মা?"
" আসলে বাবা.. মানে.."
"কি আম্মা বলো।"
" কাল প্রাইভেটের টাকা
দিতে হবে।"
আরিফ মিয়ার হাস্যোজ্জ্বল
চেহারা ম*লিন হয়ে এলো।
হাত একদম ফাঁ*কা। কিছুদিন
পরই তিনি বেতন পাবেন।
কি করে টাকা যোগান
দিবেন তা নিয়ে চিন্তায়
পড়ে গেছেন। মেঘ বাবার
দিকে আঁড়চোখে একবার
তাকালো। বাবার ম*লিন
চেহারা দেখে তার বুঝতে
অসুবিধে হয়নি। আরিফ
মিয়া নিজেকে সামলে
হেসে বললেন,
"আগামীকাল নিয়া যাইও
আম্মা।"
মেঘ মাথা নাড়িয়ে বাবার
রুম ত্যা*গ করে। মনে মনে
ভাবলো,
" বাবা-মায়েরা সত্যিই
ম্যাজিক জানে। এই যে সে
জানে তার বাবার হাতে
একটা টাকাও নেই কিন্তু
সকালে! সকালে ঠিকি তার
বাবা অথবা মা হাতে
প্রাইভেটের টাকাটা গুঁজে
দিবে।"
চলবে
#মধ্যবিত্ত_
#পার্ট০১
#Writer:#মারশিয়া__জাহান_
মেঘ
মধ্যবিত্ত - Part: 2