:-আমাদের ডিভোর্স কি
আজই হয়ে যাবে পরশ ?
,
:- মায়ের এটাই ইচ্ছে !
,
:- ও , তোমার কোনও ইচ্ছে
নেই ? আর একটু যদি তুমি
ভেবে দেখতে?
,
:- অবনী , আমি কতো বার
বলবো মা আমার সন্তান
দেখতে চান। আমাদের
বিয়ে হয়েছে এই চার বছর ।
অনেক ডক্টর আমরা
দেখিয়েছি। সবার এক কথা
তুমি কোনও দিন মা হতে
পারবে না। এখন তুমি বলো
আমি কি করতে পারি ?
,
:- আমাদের দু বছরের
ভালোবাসা আর চার বছরের
সংসার তুমি এতো
তাড়াতাড়ি শেষ করে
দিতে চাও ?
,
:- আমি অপেক্ষা করেছি
তোমার আমার
ভালোবাসার কথা চিন্তা
করে । কিন্তু মাকে আমি
কথা দিয়েছি তাকে তাঁর
শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে দেবো।
,
এই বলেই পরশ গটগট করে ঘর
থেকে বেরিয়ে গেল । আমি
ধপ করে বসে পড়লাম
বিছানায় । দুচোখ বেয়ে
অঝোরে জল গড়িয়ে পড়ছে ।
বাঁধ মানছে না কিছুতেই ।
আমার আর পরশের প্রথম দেখা
একটা শপিং মলে। আমি
একটা দোকানে বসে
কসমেটিক্স দেখছিলাম
হঠাত্ করে পিছন থেকে কেউ
একজন বলে উঠলো ,
,
:- এক্সকিউজমি , একটু শুনবেন ?
এভাবে ডাক শুনে চমকে
উঠলাম । আবার সে বললো ,
,
:- এই যে ম্যাম , আপনাকেই
বলছি ?
,
আমি একটু অবাক হয়ে কাছে
গিয়ে বললাম ,
,
:- আপনি আমাকে বলছেন ?
,
:- জী আপনাকে । আসলে বন্ধুর
বউয়ের জন্য একটা শাড়ি
কিনতে আসছি। কিন্তু চয়েজ
করতে পারছি না । প্লিজ
যদি একটু হেল্প করতেন ।
,
:- ঠিক আছে আপনি কতো
টাকার ভিতরে কিনতে চান
বলুন আমি পছন্দ করে দিচ্ছি।
,
:- টাকা নিয়ে টেনশন নেই।
যতো দাম হোক আপনি একটা
শাড়ি পছন্দ করুন ।
সেদিন খুব সুন্দর একটা শাড়ি
পছন্দ করে দিলাম । লোকটা
খুশি হয়ে ফোন নম্বর দিয়ে
বললো ,
,
:- আমি পরশ একটা বিদেশি
কম্পানিতে জব করি। আপনি
কি করেন জানতে পারি ?
,
:- আপাতত একটা স্কুলে জব
করছি। আচ্ছা আসি ভাল
থাকবেন ।
,
:- কিছু মনে না করলে আপনার
নম্বর টা যদি দিতেন । কখনও
এমন সিচুয়শনে পড়লে ফোন
করে ডেকে নিব।
সেদিন ওর কথা শুনে হেসে
দিলাম । তারপর থেকেই শুরু ।
ভালোলাগা ভালোবাসা ।
দু বছর এভাবে কেটে গেল ।
একদিন বাসা থেকে চাপ
দিলো বিয়ে করতে হবে ।
পরশ কে বলতেই ও বললো , "
আজই মায়ের সাথে কথা
বলবো।
পরশ ছিল বিরাট কোটিপতির
ছেলে । আমি মধ্যবিত্ত
পরিবারের সামান্য একটা
স্কুল মাস্টারের মেয়ে । তাই
পরশের মা সব কিছু শুনে
বললো ,
,
:-ওই ঘরের মেয়ে আমার
বাড়ির বউ হবার যোগ্য নয়।
পরশ তুমি ওকে ভুলে যাও।
কিন্তু না পরশ আমাকে
ভুলিনি। বিয়ে করে নিজের
বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল ।
পরশের মা আমাকে তিন বছর
পর মেনে নিল ।
তারপর ও আমি ভিষন খুশি
ছিলাম পরশের মতো এতো
দায়িত্ববান স্বামী পেয়ে ।
,
কিন্তু আজ পরশ মায়ের কথা
রাখতে আমাকে ডিভোর্স
দিতে প্রস্তুত । আমি কোনও
দিন মা হতে পারবো না
এটাই আমার অপরাধ । তাই
পরশ ঠিক করেছে আগের
বারের ভুল টা শুধরে মায়ের
বাধ্য সন্তান হতে ।
,
আমাদের ডিভোর্স টা হয়েই
গেল । আমি শেষ পর্যন্ত স্থির
ছিলাম । একটু ও কাঁদিনি।
চোখ দুটি বড্ড শান্ত ছিল ।
পরশের মুখে ছিল বিজয়ের
হাসি। হয়তো বাবা হবার
স্বপ্ন ওকে নতুন করে ' বাঁচতে
শেখাচ্ছিল।
,
কেটে গেল পাঁচ বছর । লোক
মুখে শুনেছিলাম পরশ নিজের
কাজিনকে বিয়ে করে বেশ
সুখেই আছে । ও সুখে থাকুক
সেইটাই চেয়েছিলাম সব সময়
।
,
:- অবনী আমার শার্ট
কোথায়? যলদি দাও অফিসে
জরুরি মিটিং আছে ।
,
:- এই নাও ,তোমার চোখের
সামনেই ছিল । আচ্ছা
ফারহান তুমি সব সময়
কাছাকাছি সব কিছু থাকতে
ও আমাকে ডাকো কেন ?
তুমি যানো না তোমার
মেয়ে কে সামলাতে গিয়ে
আমি হিমসিম খাই।
,
:- ডাকি কারণ আমার লক্ষি
বউটাকে না দেখে বাইরে
যেতে ইচ্ছে করে না।
,
:- হয়েছে হয়েছে আর আহ্লাদ
করতে হবে না। মেয়ে
দেখছে সব কিছু ।
,
:- দেখুন তাতে আমার কি। ও
জানুক ওর বাবা ওর মাকে
কতোটা ভালোবাসে।
,
:- আচ্ছা শোন, পরশু পরীর
জন্মদিন তুমি অফিসের সবাই
কে বলবে কিন্তু । আমি চাই
ওর প্রথম জন্ম দিনে সবাই
উপস্থিত থাকুক ।
,
:- ভাল কথা মনে করিয়ে
দিলে । আজই বলবো সবাই কে
। আমার অফিসের বস কে ও
বলবো। জানো অবনী স্যার
বিয়ে করেছেন পাঁচ বছর
কিন্তু কোনও বাচ্চা নেই।
,
:- ওহহহহ ! আচ্ছা ঠিক আছে
তুমি তাকে ও আসতে বলো।
,
বিকেল থেকে অতিথি সব
আসতে লাগলো। অনুষ্ঠান শুরু
হতে বেশি বাকি নেই।
হঠাত্ করে একটা পরিচিত
মুখের দিকে দৃষ্টি আটকে
গেল । পরশ ! দীর্ঘ পাঁচ বছর পর
দেখা । পরশ ও আমাকে দেখে
চমকে গেল । কারো বুঝতে
বাকি নেই কে কোথায় এসে
দাঁড়িয়েছে ।
,
পরশ আমাকে দেখে ঘামতে
শুরু করেছে। হিসেব
মিলাতে ব্যস্ত পরী কে ?
আমার তো কোনও দিন মা
হবার কথা ছিল না তাহলে
এই সন্তান ?
,
#ত্যাগ
#পর্ব এক
#অধরা জেরিন
ত্যাগ - দ্বিতীয় এবং শেষ পর্ব